*আত্ম কথা……

ভাবনা গুলো ছড়িয়ে যাক সবার প্রাণে…

তরুণ প্রজন্মের বিয়ের প্রস্তুতি ও একটি সরল মূল্যায়ন !


বর্তমান সময়ে এমন আদর্শিক ‘তরুণ -তরুণী’ আশেপাশে খুজে পাওয়া হয়তো অনেক কষ্টের ; যারা চলমান সমাজের ‘বেপর্দা -পাপাচারে’র প্রভাবে নানান মানসিক চাহিদার আগুন নিভানোর জন্য রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেনা ।এক দিকে নিজ দেশের বেপর্দা নারী আর আবেদনময়ী নানা সুরের গান যেমন” মান চাইলে মন পাবে , দেহ চাইলে দেহ” আরও এমন কত কি !অপরদিকে হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের ”ইশক মে জিসম জ্বল নে দে” ” গলা লাগ জা” শিলা কি জোয়ানি” কাটা লাগা ” ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পানি আর পানি মে আগ” এসব শোনে শোনে ‘ঈমান আর তাকওয়ার’ নুর ‘তরুণ প্রজন্মের’ মন থেকে দূরে চলে যাচ্ছে আর  ‘তরুণ প্রজন্মের’ মনে জন্ম নিচ্ছে নানা চাহিদা; আর এই চাহিদা মিটাতে গিয়ে  ‘তরুণ প্রজন্মের’  মধ্যে গড়ে উঠছে প্রেম ভালবাসা নানা রকম অবৈধ সম্পর্ক যার ফলে তারা নানা রকম পেরেশানির আযাবের গ্রেপ্তারর হয়ে হারাচ্ছে হায়াতের জীবনের ইসলামী আদর্শিক জীবন গড়া বা আল্লাহ্‌র পছন্দনীয় পথে আমল করার এত মূল্যবান সময়।

যৌবনকালে একদিকে যেমন উন্নতি ও অগ্রগতির উপযুক্ত সময়, তেমনি অবনতি ও ধ্বংসেরও প্রথম সিড়ি। এ সময় ঈমান-আকীদায় দৃঢ়তা না আসলে, আখলাক ও চরিত্রগত পরিশুদ্ধি অর্জিত না হলে জীবনের উৎকর্ষ সাধন খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মুসলিম  ‘তরুণ প্রজন্মের’  ঈমানী চেতনার মূলে কুঠারাঘাত হেনে, তাদেরকে চারিত্রিক অধঃপতনের অতল গহ্বরে তলিয়ে দিতে পাকাপাকি ব্যবস্থা করে ইহুদী-খ্রিষ্টান শত্রুদল। অপরদিকে অভিভাবক মণ্ডলীর মূর্খতা, তাদের বাস্তুবাদী মোহ, অদুরদর্শীতা ও অবহেলার কারণে যুব সমাজ ক্রমান্বয়ে যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যেতে শুরু করে। এভাবেই শুরু হয় মুসলিম  ‘তরুণ প্রজন্মের’  সমাজে চরিত্রহীনতা, নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহীতার কালো অধ্যায়। যে কারণে আজ মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষা, কৃষ্টি-সভ্যতা, ঐতিহ্য ও জাতীয় ঐক্য সবকিছুই ধ্বংস্তুপে পরিণত হতে চলেছে। এটা কেবল শত্রুদের দ্বারাই হচ্ছে না, মুসলমানদের নিজেদের অযোগ্যতা ও অসচেতনতার কারণেও ঘটেছে।

তরুন প্রজন্ম

যৌবনকালের এই আগুন যেভাবে লাগেঃ

যৌবনকালের এই আগুন কিভাবে ‘তরুণ প্রজন্মের’  মধ্যে ঠিক লাগবে তার কোন নির্দিষ্ট কারন জানা নেই। মূলতঃ অবস্থা- পরিবেশের উপর অনেকটা নির্ভর করে ।আমার সাড়া জীবনের যত নিউস এবং ঘটনা সামনে এসেছে তার মধ্যে কিছু কারন লিখলাম মিলিয়ে দেখেবন!

১- পরিবারে ‘ মা-বাবা ,বোন বা বোনে’র স্বামী’ অথবা ‘ভাই-ভাইয়ে’র বউয়ের পারিবারিক ‘আচার-আচরণ, মিলামিশা যদি পর্দাশীল না হয় তাহলে  ‘তরুণ প্রজন্মের’ সন্তানের মধ্যে সেই আগুন খুব সহজে লাগতে পারে । আমাদের উলামারা বলে – সন্তানের সামনে ‘মা-বোন’ কখনই যেন বেপর্দা হয়ে কাপড় পরিবর্তন অথবা স্বামীর সাথে ভালাবাসার আবেদনময়ি কথায়না বলে। এমন কোন কাপড় যা অন্তঃবাসের তা তার নিজের আপন ‘ছেলে-মেয়েদের সামনে রাখা যাবেনা । একটি ঘটনা বলি – আমার এক ভাই আমাকে ফোন করে মাছালা জানতে চায় । সে বলে – ভাইয়া , আমার আম্মু এমন অবস্থায় নজরে আসে যা আমি আপনার কাছে বলতে পারছিনা। এখন কি করবো ? বন্ধুগন ,চিন্তা করেন নিজের মায়ের বেপর্দা আচরণে সন্তান কি করবে বুঝতে পারছেনা !

২- নতুন প্রজন্মকে নিজস্ব সংস্কৃতির বলয় থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় বিশেষ করে হিন্দি সংস্কৃতি। এ আগ্রাসনের কবলে পড়ে পারিবারিক-নৈতিক-সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্কটে পড়ছে দেশ। ভাষা হিসেবে বাংলা এবং সংস্কৃতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব বলতে কিছু আর অবশিষ্ট থাকছে না। বিনোদনের নামে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোনের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও এবং দেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে নানা আয়োজন চলছেই। তাদের সিনেমা – নাটক অথবা অশ্লিল ভঙ্গির নাচ অথবা গান এ গুলো কত যে ক্ষতি করে তা তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা।

৩- ” ভাবি’ নামে এক শ্রেনির নারী আছে। এরা ইসলামীক আদর্শের পর্দাশীল না হলে আশে পাশে কোন ‘ছেলএ-মেয়ে’ নষ্ট না হয়ে পারবেনা। এই ভাবিদের প্রথম কাজ ননদকে নষ্ট করা  কারন ভাবীরা তার স্বামীর গোপন কথা গুলো ননদকে বলে, দেবরকে বলে অথবা ভাবীর বেপর্দা বা কথিত ‘ ফ্রি’ আচরণে পরিবারের প্রজন্মের চারিত্রিক অধঃপতন হতে পারে ।ভাবীরা কথায় কথায় -মজা করে বলে-” বিয়ে করলে টের প্লে-‘;যা আরও অনেক কিছু জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে। আমার মনে হয় বিয়ে হলে – মেয়েদের লজ্জা অনেক কমে যায়।পর্দা করলেও এমন সব শব্দ  তারা মুখে বলে যাতে অনেক সমস্যা নিজে নিজে সৃষ্টি হয়।ননদ তার বয় ফ্রেন্ডের গল্প বলে আর ভাবী ভাইয়ের দাম্পত্য ব্যাবহারে গল্প  ননদকে বলে ।এতে ননদের চরিত্র নষ্ট হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

হাদিসে এসেছে – হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “দেবর-ভাসুর মৃত্যু সমতূল্য ভয়ানক বিষয়।” অথ্যাৎ মৃত্যু যেমন জীবনে জন্য ভয়ানক, অনূরূপ ভাবে চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাইবোন ও দেবর ভাবী ও শালিকা-দুলাভাইয়ের সাক্ষাত ঈমান আমলের জন্য তদ্রুপ ভয়ানক। তাহলে সেই একি বেখায়ালি আচরণ যদি ভাবী দেবরের সাথে করে তাহলেও আগুন লাগতে পারে ।

৪- প্রাইভেট বা টিউসনি ! আমি যখন ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজে পড়তাম তখন ক্লাস ‘সেভেনের’ এক মেয়েকে পড়াতাম। ভালই টাকা পেতাম। কিন্তু এই মেয়ে এত চালু ছিল যে -তার হাসি খুশি ,আবেদনময়ী আচরণ আমার জন্য সব সময় টেবিলের মধ্যে বসেই পীড়াদায়ক হত । পড়ে আমি তাকে পড়ান বাদ দিলাম। আপনি নিজে দেখুন শিক্ষক -ছাত্রীর মধ্যে এমন হাজার হাজার ঘটনা আমরা হয়ত পেপারে পড়েছি তাই  বলা যায় প্রেম ভালবাসা গড়ে উঠার একটি প্রধান জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে -প্রাইভেট পড়ান!! শিক্ষক – ছাত্রির মধ্যে সহজে শয়তান আবেদন -আকর্ষণ সৃষ্টি করে তথা প্রেম -ভালবাসা গড়ে তুলতে পারে কারন বেশি ভাগ সময় এই দু জনই অবিবাহিত থাকে এবং  এ ভাবে কিন্তু তারা একান্ত সময় বেশি পাবার কারনে সুযোগও বেশি পাচ্ছে।

৫- ” অসৎ ‘ বন্ধুর কারনে ঐশীর মত বিকৃত মানসিকতার কি জঘন্য মেয়ে গড়ে উঠে তা তো সকলের সামনে প্রমানিত হয়েছে। এই মেয়ে কিভাবে অবাধ মিলামিশা ,পার্টি , নাচ-গান এবং নেশা করত এবং পড়ে মা-বাবা বাধা দিলে তাদের হত্যা করা খুব বেশি দিনের ঘটনা এটা না । মাত্র কিছু দিন আগে গোটা জাতি এই সমালোচনাই করেছে।আর এই মেয়ে নষ্ট হবার জন্য তার বন্ধুরাই সবচেয়ে বেশি দায়ি ছিল। তাই নষ্ট হওয়া প্রতিটা তরুণ- তরুণী খারাপ অভ্যাসের অনেক তথ্য হয়ত প্রথমে তার কাছের বন্ধুদের কাছ হতেই পেতে পারে। এই খারাপ বন্ধুদের মাধ্যমে অনেক ভাই বা বোন প্রথম খারাপ সিনেমা অথবা ম্যাগাজিন বা নারী -পুরুষের শারীরিক মিলামিশার ধারনা এবং নেশার জগতেও যেতে পারে।

৬- ” প্রেম -ভালবাসা’ একটি ব্যাধি ! এই সমাজে না জানি কত লক্ষ লক্ষ ভাল ক্লাস ‘ছেলে -মেয়ে ‘ নষ্ট হয়েছে শুধু ‘প্রেম – ভালাবসা’র কারনে তা বলে শেষ করা যাবেনা। কিছু না কিছু চারিত্রিক অধপতন ঘটবেই প্রেম করলে ।হয়তো সেটা অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় আবার অনেক ক্ষেত্রে মান -সম্মানের ভঁয়ে এটা প্রকাশ পায়না। প্রেমের সম্পর্ক অনেক গভীর হয়।তাই বিয়ের আগেই ছেলে- মেয়ে কত নিচে নামতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দেখননা কয়েকদিন পর পর পেপারে আসে অমুক প্রেমিক তার প্রেমিকার ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে ! ভিডিও ফটো দেখিয়ে প্রেমিকার বাবার কাছে টাকা দাবি করছে ; আরো কত কি ?

‘ফেইসবুকে / ইন্টারনেটে কিভাবে লাগে এই আগুনঃ–আধুনিক যুগে যুবক ও যুবতীদের মাঝে ইন্টারনেট প্রীতি, গভীর মনোনিবেশ সহকারে এর যথেচ্ছ ব্যবহার, কোন প্রকার ক্লান্তি অথবা বিরক্তবোধ ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেটের সামনে বসে থাকা এমনি একটি বিষয় যা সামাজিক ও চারিত্রিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখানে আমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত যুবক যুবতীদের ব্যাপারে কথা বলছিনা, যারা ইন্টারনেটকে বৈধ প্রয়োজনে ব্যবহার করে, অথবা জাতির কল্যাণে ব্যবহার করে অথবা বিভিন্ন কল্যাণকর অঙ্গনে ব্যবহার করে। যেমন সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, ইসলামের দিকে দাওয়াত, ইসলামের শত্রুদের জবাব দান, উত্তম চরিত্র ও উপকারী জ্ঞান বিজ্ঞনের প্রসার। আর তারা মাকড়সার জালের ন্যায় পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা এ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল উপকারী ও কল্যাণকর বিষয় সমূহ থেকে যথা সম্ভব উপকৃত হয়ে থাকে।

বরং আমরা কথা বলছি ঐ সকল হাজার হাজার যুবক ও সমূহ বিপদগ্রস্থদের ব্যাপারে, যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিপর্যস্ত হয়েছে, এতে কঠিনভাবে আসক্ত হয়েছে, এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ থেকে বিমুখ হয়েছে। ফলতঃ ইন্টারনেট এদেরকে সন্ত্রাস ও বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্ম কান্ডের দিকে ধাবিত করেছে। তাদেরকে ইন্টারনেট কি কল্যাণ উপহার দিয়েছে? আল্লাহর দিকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন উপকারিতা কি তারা পেয়েছে?
তারা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে উলঙ্গ ছবি দেখার ক্ষেত্রে, অশস্নীল দৃশ্যসমূহ উপভোগ করার জন্য এবং এমন অবৈধ ওয়েবসাইট সমূহ খোঁজার ক্ষেত্রে, যা একজন যুবককে পাশবিক শক্তিতে বন্দি করে ফেলে আর পাশবিক কুপ্রবৃত্তির সামনে দূর্বল করে ফেলে। ফলে তাকে ফলদায়ক উপকারী যে কোন কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাকে সংকীর্ণ গন্ডীতে বন্দি করে রাখে। এ চক্রটি কুপ্রবৃত্তি এবং পাশবিক শক্তির বৃত্ত, যা তাকে পূর্ণভাবে গ্রাস করে নেয়।অথচ এ ইন্টারনেট বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনাবলীর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যায়, এক কথায় যাকে ‘বিশ্বকে এক কক্ষে নিয়ে আসার মাধ্যম’ বলা যায়।

এর মাধ্যমে উলঙ্গ ছবি দেখা অথবা পথভ্রষ্ট যুবক যুবতীদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমে এত বেশী সময় নষ্ট করা হয়, যে সময় তার জীবন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যেতো। ড. সুলাইমান আল-খুদারী বলেন, এ অশ্লীল ছবি সমূহ যুবক যুবতীদের মানসিক ও স্বাহ্যগত দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষতিকর, কেননা এ ছবি সমূহ তার মনে ও ব্রেইনে সারাক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে, ফলে তা দেখা তার বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ ছবি সমূহ দেখা হয়, তখন সে যে কোন উপায়ে সে পরিতৃপ্ত হতে চায়। আর তখনই এর ক্ষতিকর দিক প্রতিফলিত হয়, ফলে সে ভ্রান্ত অভিজ্ঞতায় অথবা সাময়িক আনন্দের অভিজ্ঞতায় পা দেয়, যার ফলশ্রুতিতে সে শারিরীক ও মানসিক বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং ভ্রান্ত জীবনের বর্ণিল চরকিতে ঘুরপাক খেতে থাকে।

পরিসংখ্যানবিদ ও বিশ্লেষকদের মতেঃ-
১. ইন্টারনেটের আড্ডায় নিমজ্জিত ৮০% যুবক পরবর্তীতে বিয়ে করে না।
২. এদের ৭০% নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত করে এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে।
৩. এদের ৫৫% তাদের পরিবারের কোন খোঁজখবর নেয়না।
৪. এদের অধিকাংশই খারাপ ওয়েবসাইট সমূহের ঠিকানা বিনিময় করে, এমনকি তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহেও। ফলে এটি শিক্ষা কার্যক্রকে বড়ই বাধাগ্রস্ত করে।
৫. ইন্টারনেটে আসক্ত অধিকাংশ যুবকের শিক্ষা জীবনের উপর এর কুপ্রভাব পড়ে। তাদের কেউ কেউ লেখাপড়ায় অগ্রগামী থেকেও পরে পর্যায়ক্রমে পশ্চাদগামী হয়ে পড়ে।
৬. ইন্টারনেটে আসক্ততা নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠার পরিবর্তে অভ্যন্তরীন দ্বন্ধ-সংঘাতের ঘটনা ঘটায়। ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক নতুন মুল্যবোধ গড়ে উঠে।
৭. যেমনি ভাবে ইন্টারনেট পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল করে দেয়, তেমনি এর মাধ্যমে স্বাভাবিক বিবাহের মাধ্যমে গঠিত পরিবারতন্ত্র ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। ফলে পরিবারের পরিবর্তে অবৈধ পন্থার অবাধ জীবন যাপনে এরা অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এরা মনে করে যৌনতাই বিবাহের মূল উদ্দেশ্য, আর সে উদ্দেশ্য যদি বিবাহ ছাড়াই পূরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে বিাবহের আর প্রয়োজন কি? অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ বন্ধনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
৮. কম্পিউটার সামগ্রীর মূল্য এবং ইন্টারনেট সংযোগ সস্তা হওয়ার ফলে অধিক সংখ্যক যুবক ইন্টারনেট জগতের দিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ পায়। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ৪ লক্ষ ওয়েবসাইটের সাথে তার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। অনেক রক্ষণশীল পরিবারের সন্তানদের শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে নৈতিকতা দূর্বল হয়ে পড়ে।(ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী)

ফেইসবুকে যে ভাবে এই আগুন লাগতে পারেঃ- কিছুদিন আগে এক বোন আমাকে বলেছিল – ‘ দাওয়াত ও তাবলীগ ‘ জামায়াতের সবাই কেন ফেইসবুকে এসে দাওয়াতের কাজ করেনা? তাকে আমি বলেছিলাম – আপু , ফেইসবুক হচ্ছে একটা ‘ফেতনা , ফেতনা , ফেতনা ”! নারী , গান , উলঙ্গতা, মিথ্যা , নানান মানুষের নানা অশ্লিল মত এবং প্রেম – ভালবাসার আবেগময়ই পোস্ট গুলো দেখে ‘ দাওয়াত ‘ যারা দিবে তাদের নিজের আমল আর বেশী খারাপ হয়ে যায় ।জীবনে কোন মেয়ের উলঙ্গ শরীর দেখি নি । আল্লাহ্‌ মাফ করে’ ফেসিবুকে খুব সহজে এ গুলো আমার সামনে এসে যাচ্ছে । গান , মুভি শুনি না টাও সামনে আসতেছে ।প্রেম আবি জাবি নিয়ে মাথা ঘামাইনা কিন্তু সামনে এসে যাচ্ছে ! ফেইসবুকে কত রকম সম্পর্ক গড়ে উঠে তা আপনারা ভাল করেই জানেন।

ইউরোপ অথবা বিদেশের গেলে যেভাবে লাগে আগুনঃ- অনেকে তার সন্তানকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয় কিন্তু সেই সকল ‘মা -বাপ ‘ জানেনা তার সন্তান এই দেশে এসে চারিত্রিক কি অধপতনে পড়ে ছটফট করে ।

আমি যখন ক্লাস ৭ম শ্রেনিতে পড়ি তখন পাশের বাড়ির কোন অনুষ্ঠানে এক ভাবী আমার মুখে হুলুদ লাগানোর জন্য পিছন দিয়ে এসে শার্টে স্পর্শ করে। আমি এত লাজুক ছিলাম যে – আমার শার্ট ছিরে ফেলেছে কিন্তু উনার কাছ হতে ছুটার জন্য রীতিমত কান্না শুরু করে দিলাম। কিন্তু লজ্জার মত এত বড় নেয়ামত কিন্তু আমি পরিবেশের কারনে ধরে রাখতে পারিনি।

সেই আমি ,লন্ডনে এসে ৪ বছরে যত রঙের আর ডঙের নারীর আবেদনময়ী নানা আকর্ষণীয় আচরণ দেখেছি তা লন্ডনে আসার আগে কোনদিনও দেখিনি ।গ্রাহক সেবার জন্য যখন আমি কেশ এ দাঁড়িয়ে যাই, তখন আমি আমার ঈমানকে হারিয়ে ফেলি কারন এটা কে না জানে যে , গ্রাহকের চোখে চোখ রেখে ‘ হাসির সাথে সুন্দর নরম নরম কথা বলে সার্ভিস করতে হয়। আর না হলে একটুতে চাকরি চলে যাবে।আর এই ধোঁকাতে চোখের গোনাহ হতে বেঁচে থাকা কত কষ্টের তা এক আল্লাহ্‌ আর ভুক্তভোগী কোন অসহায় আল্লাহ্‌ প্রিয় সাধারণ যুবকই কিন্তু ভাল জানে। আর এখানে পুরুষের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি অনেক বেশি হয়। ইউরোপের মেয়েরা আবার আমাদের বাংলাদেশি মেয়েদের মত পিচ্ছি -মরা ‘টাইপেরনা। ওদের লাবণ্যতা যেমন আকর্ষণীয়; ঠিক তেমনি আছে তাদের শারীরিক উচ্চতা এবং গঠন। তাই সামনে কোন সুন্দর তক তকে সাদা,হুলদে,লাল চামড়ার একটি অর্ধ উলঙ্গ তাজা ফুটন্ত শরীরের মোহনীয় নারী,যার টাইটস অথবা ফিটিং শর্ট স্কাপ কাপড় হাঁটুর অনেক উপড়ে থাকে এবং কোন পাতলা আবরনের কাপড় বুকের উপর অর্ধ বুক খোলা রেখে এবং পিছনে পিটের উপরে কাপড়ের পরিবর্তে শুধু যদি দু-একটি ফিতা নজরে আসে তাহলে কি যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা । আবার যদি কোন মেয়ে এমন অর্ধ উলঙ্গ গেটআপের  সাথে ৩০-৪০ হাজার টাকার দামি অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম; যার প্রধান কাজ হচ্ছে নাকে যাবার সাথে সাথে যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে দেওয়া ব্যাবহার করে লাল লাল গাল আর গোলাপি দু ঠোঁটে হেসে হেসে, উঁচু জুতা পড়ে টাক টাক আওয়াজে  খোলা চূলে কোন মুসলিম যুবকের সামনে এসে দাঁড়ায় তখন কি হয় তা বলার ভাষা জানা নেই ।এমন সময় আমি অনেক মুসলিম কলিকদের বলতে শোনেছি- ‘ হায়- ”সুবাহানাল্লাহ” আল্লাহ্‌ হু আকবার”মাশাল্লাহ” এত সুন্দর নারী যেন বেহেশ্তের হুর। ওপ ”জাহিদ” একবার যদি এই মেয়েটাকে কাছে পেতাম ”ইস” কি যে করতাম , জীবন সাকসেস হয়ে যেত; আরও কত কি? যখন বলি ভাই এটা ঠিক না । তখন তারা বলে -আল্লাহই বানিয়েছে ,দেখার জন্য। বলুন তো- যে সব তরুণ -তরুণী এই সব দেশে আসে, তারা কত বার নিজেকে এই অশ্লিলতা হতে বাঁচাবে? আবার এই সব দেশে এমন কোন ম্যাগাজিন ,পত্রিকা নেই যেখানে নারী উলঙ্গ শরীরের ফটো নেই।

‘২২ ডিসেম্ভার ২০১২ ,আমি লন্ডন ‘Oxford Circus’ হতে হেটে ‘Piccadilly’ কোন একটি বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ছিলাম।চারদিকে উলঙ্গ মেয়দের আনাগনা নতুন অনেক খেয়াল মনে জন্ম দিচ্ছিল।বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কি অজানা খেয়ালে আমিও এদিক -সেদিক দেখছিলাম।হটাত,একটা শক্তিশালী মেয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে দেখলাম কিন্তু কিছু বুঝার আগেই সে আমাকে বুকে নিয়ে শক্ত করে ঝাঁপটিয়ে ধরলও,আমার এক হাতে খাবার, আরেক হাতে কোর্ট , হায় আল্লাহ্‌-মেয়েটির সাথে আরও ৮-১০টা মেয়ে আমাকে ঘিরে রেখেছে আর ও খুব লম্বা এবং শক্তিশালী প্লাস মদ খেয়ে নেশা গ্রস্ত ছিল।হাজারো মানুষের সামনে সে আমাকে কিস শুরু করে বার বার বলছে ”BABY LET’S GO WITH ME”DO U LIKE ME?”আমিঃ এমন ভিড়ের মধ্যে আটকিয়ে গেলাম এবং চারদিকে মেয়ে – ছেলে কি যে অবস্থা ! আমার তো চোখ, কান , মুখ দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছিল। কারন ছুটার জন্য আমিও পুরো শক্তি লাগালাম প্রথমে ভাবছিলাম ওই মেয়ের কোথায় আমি হাত দিয়ে ধাক্কা দিব?পরে ঠিক মনে নেই কোথায় স্পর্শ করে পুরো শক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে ওকে ফেলে দিলাম।২ মিনিটে আমার যে অবস্থা হয়েছিল সাথে ২৯০০০ টাকা ও ছিল তারপর আমি সামনে চলে আসলাম আর সে পিছে হতে ইংরেজিতে গালি দিচ্ছিল।জীবনে এই প্রথম আমি এত বেজ্জতি হলাম,আসলে একটু দূরে এসে মনে হয়েছে বেজ্জতির সাথে এমন উদ্ভুত ভাল হট ফিল করছিলাম।কোন মেয়ে এ ভাবে বুকে ঝড়িয়ে ধরবে কখনো সপ্নেও ভাবি নি।আমার কান্না ও আসে আবার হাসিও আসে তাই সেয়ার করলাম। দোয়া করবেন আল্লাহ্‌ ঈমান আমল হেফাজত করে।

আমি উপড়ের এই কয়েকটি ঘটনা এই জন্যই লিখেছি যাতে আপনাদের কাছে এই বার্তা যায়-টাকার জন্য বিদেশ যাওয়ার চেয়ে দেশে হাতুরির কাম করা অনেক ভাল কারন ঈমান তো বাঁচবে…….. কিন্তু আমাদের বাবা – মা তো দেশে গর্ব করে -আমার ছেলে লন্ডন । কসম আল্লাহ্‌র ! নিজের সন্তান কোন দিন বিদেশ পাটিয়ে নষ্ট করবোনা ইনশাল্লাহ ।

যৌবনকালের এই আগুন নিভানোর সহজ ‘রাস্তা’ :- এই ‘আগুন’ যদি কোন ছেলে- মেয়ের লেগে যায় তাহলে সমাধান একটাই বিয়ে । আপনি ছাত্র / ছাত্রি হলেও আগুন নিভানোর জন্য বিয়ের জন্য হালাল এবং বরকতের বা সুখি সুন্দর স্থির জীবনের জন্য এখনি প্রস্তুত হন। প্রেম রাখেন বিয়ে করেন। বিয়ে করার জন্য যদি আপনি সুযোগ খুঁজেন ‘ আল্লাহ্‌র কসম’ আপানকে আল্লাহ্‌ সাহায্য করবেই করবে। কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুকে- আমি বলেছিলাম -যদি তোর মধ্যে যৌবনকালের এই আগুন লেগেই থাকে তাহলে দু – রাকাত নামাজ পড়ে ‘আল্লাহ্‌র ‘ কাছে দোয়া করে তারপর আম্মুর পায়ে গিয়া পড় । আম্মুকে সব বুঝিয়ে বল। আম্মুকে বল – ঈমানের দাম অনেক বেশি । প্রয়োজনে মসজিদের ইমাম সাহেব বা কোন হক্কানি আলেম দিয়ে আম্মুকে বুঝিয়ে বলেন। বাবা বুঝতে চাইবেনা কিন্তু আম্মু নারী তাই ঠিক আপনি কি সমস্যা ফিল করছেন তা বুঝবে ।আম্মুর সাথে কথা বলার জন্য আপনি আপ্নার কোন প্রিয় বড় ভাই- বোন অথবা খালাম্মা – মামীর সাহায্য নিতে পারেন। আমি বলছি – সাহস করেন এবং পরিবারকে এটা বুঝিয়ে দেন যে , আপনার বিয়ে করা দরকার আর যদি বিয়ে তারা করতে বাঁধা সৃষ্টি করে তাহলে আপনার যে কোন গুনাহ এবং ভুলের জন্য তারা দায়ি থাকবে।

বন্ধুরা, বিয়ে আপনার ঈমানের ব্যাপার। আপনার জান্নাতের রাস্তার ব্যাপার। আপনার মনের শান্তির ব্যাপার এটা পরিবারের সম্মান বা সমাজ কি বলবে তা দেখার বিষয় নয়। তাই আপানদেরকে বলি – চাকরি , বাড়ি , গাড়ি অথবা অন্য চেষ্টা পড়ে – আল্লাহ্‌কে সাথে নিতে হলে আগে বিয়ের চেষ্টা করতেই হবে। কিভাবে না বুঝলে কোন আলেম ভাল বুঝবে।এস্তেখারা করেন , মাসোয়ারা করেন ।

একটা কথা – চিঁড়া পানিতে ভিজবে যেমন ঠিক তেমনি যৌবনকালের এই আগুন একমাত্র বিয়েতে সমাধান হবে আর না হয় কত যে বিপদ নেমে আসবে তা আল্লাহ্‌ই একমাত্র ভাল জানে।

কুরআন ও হাদিসে বিবাহঃ-

বিবাহ ধর্ম কাজে সহায়ক, শয়তানের চক্রান্ত থেকে আত্মরক্ষার মুজবুত প্রাচীর এবং উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান উপায়। এই সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে নবী কারিম (সঃ ) অন্যান্যই নবীদের উপর গর্ব করবেন।
দেখুননা কুরআন ও একি সাক্ষী দেয়-”তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।(সূরা আর-রুমঃ২১)অংশ।

হাদীসে আছে,“যে ব্যক্তি চরিত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, আল্লাহ তাআলা তার সাহায্য করাকে নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন।”(তিরমিযী, হাদীস : ১৬৫৫; নাসায়ী, হাদীস : ৩২১৮)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করবে (কেবল) তার ক্ষমতার কারণে আল্লাহ তাআলা তার অসহায়ত্বই বৃদ্ধি করবেন। যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করবে তার সম্পদের লোভে, আল্লাহ তাআলা তার দারিদ্র্যই বৃদ্ধি করবেন, যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করবে তার বংশমর্যাদার কারণে আল্লাহ তাআলা তার হীনতাই বৃদ্ধি করবেন আর যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করবে নিজ দৃষ্টি সংযতকরণ, চরিত্রের হেফাযত ও আত্মীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর জন্য তাকে কল্যাণময় করবেন।”(তবারানী, আলআওসাত, হাদীস : ২৩৪২)

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা হল-إذا خطب إليكم من ترضون دينه وخلقه فزوجوه إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد عريض.‘যার দ্বীনদারী ও আখলাক-চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, এমন কেউ প্রস্তাব দিলে তার সাথে তোমরা বিবাহ সম্পন্ন কর। তা না করলে পৃথিবীতে ফিৎনা দেখা দেবে ও ব্যাপক ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে।’(তিরমিযী, হাদীস : ১০৮৪)

এবং আরো ইরশাদ হয়েছে,تنكح المرأة لأربع : لمالها ولحسبها ولجمالها ولدينها فاظفر بذات الدين تربت يداك.‘নারীকে বিবাহ করা হয় চারটি জিনিস দেখে। তার সম্পদ দেখে, বংশমর্যাদা দেখে, রূপ দেখে এবং দ্বীনদারী দেখে। হে মুমিন! তুমি দ্বীনদার নারী বিবাহ করে ধন্য হয়ে যাও।’(বুখারী, হাদীস : ৫০৯০; মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৬)

একটা চমৎকার আকর্ষণীয় হাদিস এবং তার ব্যাখ্যাটা বোঝলে স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গভীর মর্ম বোঝা সহজ হতে পারে ইনশাল্লাহ।।

”রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন তোমাদের মধ্য হতে কোন মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় তখন কালো ও নীল বর্ণের দু জন ফেরেশতা আগমন করে। একজনের নাম মুনকার অন্যজনের নাম হল নাকীর। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী বলতে? সে বলবে, সে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তখন ফেরেশতাদ্বয় বলবে, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দেবে। এরপর তার কবরকে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাকে বলা হয়, এখন তুমি নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ দেব। তখন ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন।আর যদি সে ব্যক্তি মুনাফেক হয়, সে উত্তর দেবে আমি তাঁর (রাসূলুল্লাহ) সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে শুনেছি তাই বলতাম। বাস্তব অবস্থা আমি জানি না। তাকে ফেরেশ্‌তাদ্বয় বলবে, আমরা জানতাম, তুমি এই উত্তরই দেবে। তখন মাটিকে বলা হবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করো। মাটি এমন চাপ সৃষ্টি করবে যে, তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। কেয়ামত সংঘটনের সময় তার উত্থান পর্যন্ত এ শাস্তি অব্যাহত থাকবে। (তিরমিজী, তিনি বলেছেন হাদীসটি হাসান গরীব। হাদীসটি ইমাম মুসলিমের বিশুদ্ধতার শর্তে উত্তীর্ণ)

বন্ধুগন উপরের হাদিসে ”এখন তুমি নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ দেব। তখন ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন।)” এ কথাটি কেন বলা হবে দুনিয়াতে এত কিছু থাকতে নব বধূর মত ঘুমাতে কেন বলা হবে ? কারন একটি পুরুষ জীবনে যৌবনের ১৪-২৬ বছর বা তার কম বা বেশি সময় যখন উপ্তপ্ত যৌবনের ঢৈউয়ের নানা রকম কষ্ট সয্য করে একজন নারীর প্রাকৃতিকভাবে এমন কামনীয় ভাব, আকর্ষণীয় রং, পাগলকরা ডং, চাঁদের টুকরার মত কপোল,হাসি মাখা মুখ, শরম মাখা স্বভাব, নরম মাখা প্রভাব,তীরের মত ধারালো চোখের চাহনি,মনোরম দুটি ঠোট,মুক্তা ঝরানো হাসি,নরম পেলব হাত,নানা ডংয়ের বেশ, চমক লাগানো কেশ আর কত কি যা বলা আমার লক্ষ্য নয় কেননা আমি শুধু বলতে চাই আল্লাহ্‌ তালার এই নেয়ামত সমূহকে সাজিয়ে তার স্বামীকে উপহার দেয় তখন স্বামীর কাছে বাগানের শত শত ফুল এক দিকে ,আকাশের মিটি মিটি তারা এক দিকে,হাজার গোলাপের গুচ্ছ এক দিকে, হাজার রজনীগন্ধার সুবাস এক দিকে,পূর্ণিমার চাঁদ এক দিকে,পাখির কিচির মিচির এক দিকে,আষাঢ়ের বৃষ্টি এক দিকে,গৌধুলির লুকোচুরি আলো আর অন্ধকার এক দিকে ,পাখির কোলাহল এক দিকে আর অন্য দিকে প্রিয়তম স্ত্রি স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে একটু মুচকি হেসে স্বামীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলা একদিকে অথচ এক দিন কোন নারী তার সামনে আসলে সে লজ্জা পেত,বাবা ,মা ,আত্মীয় দের ভয়ে সে তার কাছ হতে দূরে থাকতো কিন্তু আজ সেই নারীর বিছানায় দু জন এক সাথে দুনিয়ার সব কিছুতে যত সুখ শান্তি আল্লাহ্‌ রেখেছে এই মিলনের মত সুখ কোন কিছুতে চিন্তা করা যায় না।স্ত্রীর ভালবাসার পর আজ তার স্বামী ছাড়া কেও জাগাতে পারে না যদিও বিয়ের পর নিজের কামরার বাহিরে সবাই আছে তবে আজ কোন ভয় নেই। ঠিক কবরে ওঁ নানা কিছুর ভয় থাকবে কিন্তু প্রশ্নের জবাব দিতে পারলে ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলবেঃ- তুমি ঘুমাও সেই নব বধুর মত ঘুমাও, যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন।ওখানে স্ত্রী স্বামীর জন্য কিছু করেই ঘুমাই এখানে কবরে ওঁ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরই তাকে ঘুমাতে বলে নব বধূর মত।

আমি বুঝাতে চেয়েছি –
আজ দুনিয়াতে আল্লাহ্‌ যত কিছুতে পুরুষের জন্য সুখ রেখেছেন বা সুখ সে পেয়ে থাকে কিন্তু একজন নারীর সাথে হালাল ভালবাসার মাঝে মহান আল্লাহ্‌ তার চেয়ে কোটি গুন বেশি শান্তি রেখেছে।বাস্তব সত্য কথায় এটা দুনিয়ার যত কিছু পাওয়াকে মানুষ খুশি মনে করে কিন্তু নিজের স্ত্রীর সাথে ভালবাসার সময় মনের মত কিছু ফেলে সে সেটার চেয়ে বড় পাওয়া মনে করে যা সে অন্য কোন কিছুকে মনে করে না,যদিও ব্যাপারটা কেও প্রকাশ করে ,কেও হয়তো লজ্জার কারন প্রকাশ করে না ।আমি বিয়ে করি নি তবে এটা অজানা কোন জটিল বিষয় নয়।

বিয়ে নিয়ে সাহাবী এবং তাবীঈদের কিছু সুন্দর উক্তিঃ-

___হযরত ওমর (রাজি) আনহু বিবাহ সম্পর্কে বলেনঃ ধর্ম প্ররায়নতা বিবাহে কোন বাধা নয়। কেবল দুটি বিষয় বিবাহে বাধা সৃষ্টি করে – অক্ষমতা এবং দুশ্চরিত্রতা।

___হজরত আব্বাস (রাজি) আনহু বিবাহ সম্পর্কে বলেনঃ- বিবাহ না করা পর্যন্ত আবেদের এবাদত পূর্ণ হয় না । মানি কাম ভাব প্রবল হওয়ার কারনে অন্তরের নিরাপওা বিবাহ ব্যাতিত কল্পনীয় নয় । কেননা অন্তরের নিরাপওা ছাড়া এবাদত হতে পারেনা। এ জন্য আব্বাস রাজি আনহু তার কিছু গোলাম বালেগ হওয়ার পর তাদের এক সাথে করে তাদের বলেন- ‘ তোমরা বিবাহ করতে চাইলে, আমি তোমাদের বিবাহ করে দিতে পারি ”।-কারন মানুষ যখন বিবাহ না করে জিনাহ করে ,তখন তার অন্তর হতে ঈমান বের করে নেওয়া হয়।

____হজরত ইবনে মাসউদ (রাজি) আনহু বিবাহ সম্পর্কে বলেনঃ ধরে নেওয়া হোক যে, আমার বয়সের মাত্র ১০ দিন বাকী আছে , তবুও বিবাহ করে নেওয়া আমার কাছে ভাল মনে হয়, যাতে আল্লাহ্‌ তালাহর সামনে বিবাহিত গণ্য হয়ে যাই।

___ মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাজি) আনহু বিবাহ সম্পর্কে কথিত আছেঃ- মুয়াজ ইবনে জাবালের ২ জন স্ত্রী মহামারীতে মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং নিজেও মহামারীতে আক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু এই অবস্থায় তিনি বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছেন- ” আল্লাহ্‌র সাথে অবিবাহিত হয়ে সাক্ষাৎ করতে আমার লজ্জা বোধ হয়।

____বিশর ইবনে হারেস রহঃ বলেনঃ- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ৩ টি বিষয়ে আমার উপর ফজিলত রাখেন ,এক – তিনি নিজের জন্য ও অন্যের জন্য হালাল রুজি তালাশ করেন আর আমি কেবল আমার নিজের জন্য রুজি তালাশ করি । ২য় – তিনি বিবাহ করার অবকাশ রাখেন;কিন্তু আমি এই ব্যাপারে সংকীর্ণ। ৩য় – তিনি জনগণের ইমাম।

ইমাম হাম্বল (রহঃ) তার ২য় স্ত্রী মারা যাবার পরের দিন ২য় বিবাহ করেন এবং বলেন যে , রাতে মনে হয়েছে যেন আমি অবিবাহিত! সুফিয়ানা ইবনে ওরায়না বলেনঃ- অধিক বিবি দুনিয়াদারি নয় ।কেননা , হজরত আলি রাজি আনহু সাহাবিদের মধ্যে দুনিয়া ত্যাগী ছিল তবুও তার ৪ জন বিবি ছিল । এখন আপনাদের প্রশ্ন থাকতে পারে বিবাহ করলে কি উপকারিতা আছে ? হাঁ ভাই বিবাহের মধ্যে ৫ টি উপকার আছে । ১ম উপকারিতা – সন্তান হওয়া ২য় উপকারিতা – কামভাব নিবারণ করা ৩য় উপকারিতা – চিওবিনোদন এবং এর দ্বারা এবাদতে শক্তি সঞ্চয় ।কেননা মন সব সময় এবাদত হতে পলায়ন করে । মনকে জোর করে সব সময় তার ইচ্ছার খেলাফ এবাদতে রেখে রাখলে সে অবাধ্য হয়ে যাবে ।তাই পক্ষান্তরে হালাল বিনোদনের মাধ্যমে মনকে সুখ দিলে সে খুব খুশি হয়। তাই নারীর সাথে এত তৃপ্তি , এত আনন্দ -বিনোদন পাওয়া যায়; যা সকল ক্লেশ দূর করে দেয় ।

__আলি (রাজি) আনহু এ সম্পর্কে বলেনঃ একটু সময় হলেও মনকে সুখ দাও। কারন ,যখন মনকে জোর করে কাজে লাগিয়ে লাগলে মন অন্ধ হয়ে যায়। ৪র্থ উপকারিতাঃ- ঘরকন্নার ব্যাবস্থা করা তথা রান্নাবান্না করা , বাসা সাজিয়ে -গুছিয়ে রাখা মানি সংসারে একটি মেয়ে যা কিছু করে থাকে । কারন , কোন পুরুষ যদি সংসারের একা থাকে তাহলে সে সব কিছু করে বাসার বাহিরে কাজ করতে পারবেনা , এলেম – আমলে তেমন সময় পাবেনা।

____ আবু সোলায়মান দারানী বলেনঃ- পবিত্র ,নেককার স্ত্রী নিয়ে সংসার করা দুনিয়াদারির মধ্যে গণ্য করা হয়না। ” হে পরওয়াদেগার , আমাদের দুনিয়াতে পুণ্য দান কর ।

___ এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে মুহাম্মদ ইবনে কা’ব বলেন ঃ- এই আয়াতে দুনিয়ার পবিত্র নেককার স্ত্রী বুঝানো হয়েছে। হজরত ওমর রাজি বলেন- ঈমানের পর স্ত্রীর চেয়ে উওম কোন কিছু দেওয়া হয়নাই।

আর কি লিখবো ? প্রেম করবেন না বিবাহ করবেন এখন আপনি ভেবে দেখুন। আপনার অবহেলা আপনার বিয়ে করাকে অনেক বছর দূরে নিয়ে যেতে পারে আর এতে আপনি জ্বলতেই থাকবেন যৌবনকালের আগুনে।আর যদি কোন জটিল ভুল করে ফেলেন তাহলে জীবনের সকল আশা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে তথা ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনে নেমে আসতে পারে অন্ধকার।

সূত্র

কৃতজ্ঞতাঃ  জাহিদ সোহাগ (প্রজন্ম ফোরাম)

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.